কবি উত্তম দত্তের বাক প্রতিমা : অনুষঙ্গে ও প্রসঙ্গে এক মায়াবী শব্দ কোলাজ

পল্লব গাঙ্গুলি

(এই বিভাগে থাকবে আমাদের পছন্দের কোনো কবির একাধিক কবিতা এবং তাঁর কবিতা নিয়ে লেখা অন্য লেখকের গদ্য)

অনেকে মনে করেন সময় ও পরিসরের খণ্ডধারণা থেকে আবেগায়িত বৌদ্ধিক জটিলতাকে (অভিজ্ঞতা) কবিতার আঙ্গিকে মুক্তি দেওয়াই চিত্রকল্প বা বাক প্রতিমার মূল লক্ষ্য। গ্রহণ-বর্জঠ¨-স্বীকরণে পরিশুদ্ধ অভিজ্ঞতা ও শৈল্পিক পরিবেশন এর অন্তর্বর্ঠীতেই চিত্রকল্পৠর রহস্যভূমিॠবাক্যময়তা নয়, বরং তীব্র ইন্দ্রিয়সঠবেদনা ও ভাবের সম্মিলনে বাঙ্ময় হয়ে ওঠাতেই চিত্রকল্পৠর যাবতীয় সার্থকতা! শব্দ, শব্দ এবং শব্দই – শব্দশিল্পৠর রং। ভাবের সংস্থাপন তার শেষ তুলির টান।
পুষ্পল শব্দের মায়াবী আবেশ আর কবিতার চলনে যাঁরা এখনও সুরেলা নূপুরধ্বনঠখোঁজেন, প্রচারবিমু খ কবি উত্তম দত্তের কবিতা হয়তো তাঁদের হতাশই করবে। তাঁর কবিতায় ব্যবহৃত শব্দবন্ধ ও শব্দের আপাতসারল্ঠজনারণ্যে এক মায়াবী প্রতারক। চিত্রকল্পৠর তাৎক্ষণিক নেশাতুর ঘোর লঘু হয়ে এলে শব্দের অমোঘ অভিঘাতে পাঠক আক্রান্ত হন। এরপরই পাঠক আবিষ্কার করেন ব্যবহৃত শব্দের অন্তর্লীন পৌরুষে আর বাচ্যার্থৠর ঋজুতায় চিত্রকল্প মিতকথনে কীভাবে ভাস্বর আর বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে।
বলে নেওয়া ভালো এই কবির কাব্যভাষাৠকোন প্রস্তাবিত বা ঘোষিত বৈশিষ্ট্যৠর সমর্থনে বিভিন্ন চিত্রকল্প থেকে তথ্য আহরণ এই নিবন্ধের দিকচলন (orientation) নয়। বরং কয়েকটা নমুনা চিত্রকল্পৠর শরীরের মায়াবী প্রাণের রসাস্বাদন থেকে à¦•à¦¾à¦¬à§à¦¯à¦¬à§‹à¦§à§‡à ° অন্তরাত্মঠকে ছুঁতে চাওয়াই এই লেখার অভিমুখ।
“জাহাজ বন্দর ছেড়ে চলে গেলে
সমস্ত গীর্জার ঘন্টা থেমে গেলে
রূপবতী চাঁদ আহ্লাদে আটখানা হলে
চেষ্টা করে দেখেছি, মানুষ মারা খুব শক্ত কাজ
কখনও পারিনি” (“নরহত্যা ও নির্মাণ বিষয়ক”)
এক à¦‰à§Žà¦•à§‡à¦¨à§à¦¦à§à¦°à ¿à¦• চলনে সৃষ্টি ও ধ্বংস – দুই বৈপরীত্যেঠ° সংশ্লেষণ (ambivalence) থেকে বিশুদ্ধ নির্মাণের দিকে কবির নির্বিকল্ঠঅভিযাত্রাॠবিষয় নয়, আমাদের উদ্দেশ্য কিন্তু চিত্রকল্পঠির সৌন্দর্য্য ও প্রাণের স্পন্দনকে ছুঁয়ে দেখা। নরহত্যার প্রস্তুতিত ে দ্বিধাজর্জ র হৃদয়ের হ্যামলেটসৠলভ সুদীর্ঘ প্রতীক্ষাঠ° শেষে এক নৈমিত্তিক মুহূর্ত সংহত হয় গীর্জার ঘন্টা ‘থেমে গেল’। জাহাজের বন্দর ছেড়ে চলে যাওয়া যে নির্জনতা সুনিশ্চিত করে, ‘ঘন্টা থেমে’ গেলে তাতে নৈঃশব্দ্যৠর অনুষঙ্গও যুক্ত হয়। দ্বন্দ্বদৠর্ণ কবিহৃদয় এই নৈঃশব্দ্য আর নির্জনতার à¦…à¦ªà§‡à¦•à§à¦·à¦¾à¦¤à§‡à ¦‡ ছিলেন। জাহাজের ‘বন্দর ছেড়ে’ যাওয়ার অনুষঙ্গে যে গতিশীলতা তা কবিহৃদয়ে সঞ্চারিত হয়। তাই তিনি আবেগমথিত ও আলোড়িত। দ্বিধা থেকে ততক্ষণে কবিকে মুক্তি দিয়েছে ‘রূপবতী চাঁদ’। সুন্দরী চাঁদের মায়াবী আহ্লাদ পুনরুদ্ধার করেছে দিশেহারা কবির জীবনতৃষ্ণঠকে। কবি নিজের অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। তিনি জীবনের পক্ষে। হত্যার অক্ষমতাই তাঁর à¦œà§€à¦¬à¦¨à§€à¦¶à¦•à§à¦¤à ¿à¥¤ গতিশীল চিত্রময়তায় জীবনতৃষ্ণঠর ভাবানুষঙ্ঠযুক্ত হয়ে দ্বন্দ্বপ্ রকম্পিত হৃদয়ের উত্তরণ অসাধারণভাঠে চিত্রিত হয়েছে এই সার্থক চিত্রকল্পৠ।
বাক প্রতিমার একটু ভিন্নতর প্রয়োগে যাওয়া যাক –
“...তোমাদের জানলায় আলো দেখে
ভাবি, ওইখানে জেগে আছে সোহাগ শর্বরী। ওইখানে কাঁচের
বাসায় সারারাত খেলা করে রঙিন মাছেরা।”
“...মনে হয় মাছ নয়,
একোয়ারিয়ঠ® ভেঙে বেরিয়ে আসছে নোনাজল,
মাছের আঁশটে গন্ধ, জলজ স্যুটকেশ। (â€˜à¦à¦•à§‡à¦¾à§Ÿà¦¾à¦°à¦¿à §Ÿà¦¾à¦®â€™)
চিত্রকল্পঠির অন্তরে এক রূপকের স্পন্দন। মায়াবীরাতৠর ‘সোহাগ-à¦¶à¦¾à¦°à §à¦¬à¦°à§€â€™à¦¤à§‡ স্বপ্নলোঠের অনুষঙ্গ উঠে এলে à¦•à¦²à§à¦ªà¦²à§‡à¦¾à¦•à§‡à ¦° উড়ান পরিতৃপ্তির অঙ্গীকার খোঁজে। ‘কাঁচের বাসা’র ভঙ্গুরতায় ‘রঙীন’ পৃথিবীর মায়াবী বিচ্ছুরণ স্তিমিত হয়ে এলে উদ্ভাসিত à¦…à¦¨à§à¦¤à¦°à§à¦²à§‹à¦•à ‡ কবি প্রাতিভাসি ক দৃশ্যবাস্ত বের আড়ালে সজ্জিত বাগানের হৃতসৌরভ ফুল আর পরিব্যাপ্ত স্বপ্নের কঙ্কাল খুঁজে পান।
চিত্রকল্পঠিতে একই সঙ্গে চিত্রের তীক্ষ্ণতা এবং রূপকের অন্তঃশীল ভার বিদ্যমান। সূক্ষ্ম শ্লেষ! অতিলৌকিক মায়া কাটিয়ে অন্তর্ভেদৠ€ দৃষ্টিতে স্বপ্নপ্রয় াণের আলোয় কবি খুঁজে পান লৌকিক বাস্তবের অনিবার্যকৠ‡à¥¤ চিত্রকল্পঠির ও উত্তরণ ঘটে অতিলৌকিক মায়ালোক থেকে à¦•à¦¨à§à¦Ÿà¦•à¦¦à§€à¦°à§à £ স্পন্দমান বাস্তবে।
এই কবি পুরাণ বা ইতিহাস অনুসন্ধান করে তুলে আনেন এক একটা হীরকখণ্ড। তারপর অনুশীলিত অর্থের বাইরে বিবর্তিত চেতনার গহনে ডুব দেয় তাঁর কবিতা।
“একটা বন্ধ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের কবি বন্ধুটি
চিৎকার করে বলল, শয়তান বাড়ি আছো?- যেন মুহূর্তে
ভেঙে পড়ল চরাচরের সমস্ত কাঁচ, সহস্র আয়না, ভেঙে যাওয়া
আয়নার ভিতরে আমাদের অসমাপ্ত ছোট ছোট মুখ, অযুত উদ্ভাস।” (‘কোডেক্স গিগাস’)
‘শয়তানের বাইবেল’-এর প্রাথমিক স্ফুলিঙ্গঠ•à§‡ গৌণ করে মনস্তাত্ত্ বিক ‘আয়না’য় উদ্ভাসিত হয় আমাদের অবদমিত গহন লালনের কোন এক অসংস্কৃত প্রতিবিম্ব । ‘শয়তান বাড়ি আছো?’ – এই বাক্যবন্ধ যেন চিরকালীন ‘অবনী’ অন্বেষার এক নতুন প্রস্বর হয়ে উঠে আসে। আলো আর আঁধারের প্রান্তরেঠায় শয়তান যেন এক প্রান্তিক মানুষ। এক অন্তর্ভেদৠ€ আত্মানুসনৠধানের পথে নিভৃত à¦à¦•à¦¾à¦•à§€à¦¤à§à¦¬à§‡à ¦° অনুষঙ্গে মানবাত্মার অসহায় ক্রন্দনই যেন ধ্বনিত হয় ঐ বাক্যবন্ধৠ। এই চিত্রকল্পঠিতে ইন্দ্রিয়সঠবেদনা মুখ্য নয়; মুখ্য হোল এক অনন্যপ্রতঠম বোধি। খণ্ডিত বিম্বের কোলাজে মনস্তাত্ত্ বিক আয়নায় তারই নির্যাস উঠে আসে। গতানুগতিক অর্থসীমার বাইরে বাস্তব ও পরাবাস্তবৠর প্রান্তসীঠায় নতুন ব্যঞ্জনায় কবি ছুঁয়ে যান শয়তানকে। আমাদের অন্তর্জীবঠ¨à§‡à¦° প্রত্যন্ত প্রদেশে মানবিক রসে জারিত এই শয়তানের প্রতিচ্ছবঠ। শয়তানের নব চরিত্রায়ণৠই এই চিত্রকল্পঠির দৃশ্য-বর্ণ-ঠ¸à§à¦ªà¦°à§à¦¶-এর স্পন্দন বিধৃত।
কখনও কখনও এই কবির কবিতায় প্রতীক হয়ে উঠে আসে এক একটা প্রচলিত বাক্যবন্ধॠতারপর জটিল চিন্তন আর চৈতন্যে ঋদ্ধ কবিমনের সূক্ষ্ম স্পন্দনগুঠি আবর্তিত হয় এই প্রতীককে আশ্রয় করে। তারপর রেখার টান আর রঙের চাপান। বোধের অনুপুঙ্খ ঢেউয়ের অভিঘাতে প্রতীকে অবরুদ্ধ খণ্ডধারণাঠবিনির্মাণ ঘটে। প্রতীকের শিল্পমুক্ঠি ঘটে তাঁর কবিতায়।
“একটা নদীর শব্দ শুনতে পাচ্ছি। একটা নির্জনতার শব্দ। কে
যেন বলেছিল; স্বর্গের কোনও পাসওয়ার্ড হয় না। বিহ্বল আমি,
বসে বসে ভাবি, ঠিক কোনখানে একাদশতম আঙুল ছোঁয়ালে
ওই নিঃশব্দ তোরণ খুলে যাবে? সেই হারিয়ে যাওয়া আঙুলের
শোকে হিম হয়ে বসে থাকে অবশিষ্ট সমস্ত আঙুল।।..”
(‘স্বর্গের খুব কাছে’)
এক গতিশীল চিত্রময়তার প্রকরণে কবিতায় অন্তধৃত গল্পে দীর্ঘলালিঠপ্রত্যয়ের ক্রমিক উদ্ভাস। কবিতাটা ছিল দুঃসাহসিক পুরুষাকারৠর এক অনুপম à¦¬à¦²à§à¦®à§€à¦•à¦—à¦¾à¦¥à ¾à¥¤ চিত্রকল্পৠর শরীরে সনাতনী সংজ্ঞার অনুসরণে শ্রুতির অনুষঙ্গ অনুরণিত হয় ‘নদীর শব্দ’ ‘নির্জনতাঠশব্দ’ ও ‘নিঃশব্দ তোরণ’ – তিনটি শব্দবন্ধেॠ‘আঙুল ছোঁয়ালে’ ও ‘হিম’-তে স্পর্শানুভ ূতির স্পন্দন। ‘নির্জনতাঠশব্দ’-তে বিরোধাভাসৠর (oxymoron) আঙ্গিক। কিন্তু ইন্দ্রিয় সংবেদনাকে অতিক্রম করে ভাবকল্পের উপরিপাতন চিত্রকল্পঠির কাঙ্খিত ঊধ্বায়ন ঘটায়। ‘বিহ্বল আমি ...... খুলে যাবে’-তে তারই ‘রনণ’ ধ্বনিত হয়। অবশেষে অগ্নিশুদ্ঠ§à¦¿à¦° পথে পুরুষাকারৠর অনুষঙ্গে যৌনতার শান্তায়ন (sublimation)ঘটে। বিশুদ্ধ যৌন প্রতীক ‘একাদশ অঙ্গুলী’র নবজন্ম ঘটে কবির কলমে। যেন অনেকগুলো চিত্রকল্প ও ভাবকল্প পরস্পরকে ছুঁয়ে একটা আশ্লিষ্ট বাক প্রতিমা (tied images) তৈরী করে।
ব্যক্তিক (individual) অনুভূতি মাত্রই ব্যক্তিগত (personal) নয়। সাধারণীকরঠ£à§‡à¦° আলোয় ব্যক্তিক অভিজ্ঞতা অন্তর্মুখৠ€à¦¨à¦¤à¦¾à§Ÿ সংহত হয় কবিতায় উত্তমপুরুঠের উচ্চারণে –
“অনিমেষ দরজা খোল, বাইরে এসে দাঁড়া...
..............................................
......, জানি তোর মোহনায় জল আছে,
স্রোত নেই কোনও, বিষাদ ঘুমিয়ে আছে একা ঐখানে
নাবালক ভিখিরির মতো, কিন্তু এ তল্লাটে সকলেই জানে
ডাকাত-à¦ªà§à¦°à§‡à ®à¦¿à¦• আমি, অস্ত্র আছে হৃৎপিণ্ডে রক্তজবা আছে।”
(‘অনিমেষ দরজা খোল’)
রূপকের সমান্তরালৠএক অন্তর্লীন স্বগত সংলাপ। বাস্তবের ‘আমি’র দুর্বলতার বিপ্রতীপে প্রাত্যহিঠঅন্তঃসংঘাঠ¤à§‡ বিবেকের দরজায় কড়া নাড়ে বিকল্প অস্মিতা (alter ego)।
এই দৃশ্যকল্পঠি যতটা চিত্রকল্প তার থেকে অনেক বেশী বাক প্রতিমা। চিত্রময়তায় স্রোতহীন নিশ্চলতা সুনিশ্চিত হয়েছে। Personification (বিষাদ) ও Metaphor (হৃতপিণ্ডেঠ° রক্তজবা) - এর সার্থক স্পর্শ আছে। কিন্তু এগুলো ছাপিয়ে ‘ডাকাত প্রেমিক’-এ ¦° প্রতিস্পর্ ধী ঘোষণায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মনস্তাত্ত্ বিক জটিলতার অন্তর্বয়নà¥
কখনও কখনও তাঁর কবিতা সমান্তরালৠবহমান শ্রেয় আর প্রেয়র অন্তর্বর্ঠীতে বিভ্রান্ত জীবনমুখী অস্তিত্বেঠ° এক অনুপুঙ্খ স্পন্দন।
“...মুহূর্তে ই সমস্ত রাক্ষুসে ক্ষিদে ও ক্ষতচিহ্ন
ভোরের ডাহুক হয়ে হেঁটে যায় জলের কিনারে। পৃথিবীর সমস্ত
ঘুম নেমে আসে আমার দুচোখে। প্রগৈতিহাঠিক অরণ্য-ফলের
সুগন্ধে ভারী হয়ে ওঠে নদীমাতৃক বাতাস।”
(‘শবরী বিশ্বাস ও বসন্ত সেনার গল্প’)
জাগরণ আর সুপ্তির অন্তর্বর্ঠীতে চেতনা ও ইন্দ্রজালৠর অন্বিত সম্মোহনের দোলাচলই জীবন। রূপ-রস-à¦¸à§à¦ªà¦°à à¦¶-ভালোবাসা ¦° পৃথিবীতে নিত্যদিনেঠশ্বাসপ্রশ্ বাসও একসময় অনিকেত হয়ে পড়ে। অতৃপ্ত তৃষ্ণা তখন এক সম্পূরক পৃথিবী খোঁজে প্রসন্ন প্রতিশ্রুত ির প্রত্যাশায় । এই à¦…à¦¨à§à¦¤à¦ƒà¦¸à¦‚à¦—à§à °à¦¾à¦®à§‡à¦° গহন কথাই এ কবিতা।
চিত্রকল্পঠাকে ছুঁয়ে দেখা যাক।
‘হেঁটে যায় জলের কিনারে’ এই বাক্যবন্ধৠর শব্দ অবয়বে গতিসমাপ্তঠর শেষে প্রশান্তির প্রতিশ্রুত ি সুনিশ্চিত হয়। পরের ছত্রে তারই বিস্তারে ভাবের ধারাবাহিকঠা রক্ষিত হয়। তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের প্রশান্তিয াত্রার যাবতীয় ভরবেগ (Momentum) à¦¸à§‚à¦šà¦¾à¦—à§à¦°à¦¸à¦‚à ¹à¦¤ হয়ে ওঠে শেষ ছত্রে। কিন্তু পাঠকের মনে আপাতপাঠে সঞ্চারিত হয় একটা প্রশ্ন। কেন ‘ভারী’? ‘অরণ্য-à¦«à¦²à§‡à ¦°â€™ সুগন্ধে যে প্রাণময়তা, উজ্জীবন ও আশ্রয়ের যে প্রতিশ্রুত ি থাকে তার অনুষঙ্গে কেন এই নেতিবাচক বিশেষণ? পুনঃপাঠে বুঝতে পারা যায় এই ‘ভারী’ প্রাক-পর্বৠ‡à¦° বিমর্ষ শূন্যতার ক্ষয়িষ্ণু উত্তরাধিকঠ¾à¦° মাত্র। ‘ভারী’র অনুষঙ্গে আভাসিত হয় নোঙর। উলম্ব নিম্নমুখীঠ¨à¦¤à¦¾à¦° অনিবার্যতঠয় ‘ভারী’ আদি ও অকৃত্রিম আশ্রয়ের স্থায়ী মাধুর্যকে সুনিশ্চিত করে।
দৃশ্যময়তা, গতিময়তা ও গন্ধ - বৈশিষ্ট্যৠর প্রকরণে ইন্দ্রিয় সংবেদনা গৌণ হয়ে যায় চিত্রকল্পঠিতে। বরং তা অনন্য হয়ে ওঠে নিহিত অর্থের বহুবর্ণীয় ব্যঞ্জনায়।
পড়ে দেখা যাক আরও একটা কবিতার অংশ –
“দুহাতে নিঝুম বৃষ্টি, নিশ্চুপ শূন্যতা শুধু...
ভোরবেলা বাড়ি ফিরে দেখি, উঠোনের এক কোণে
পড়ে আছে বৃষ্টিধোয়ঠসূর্যকান্ঠ¤à¦®à¦£à¦¿â€
চিত্রকল্পঠির গাঠনিক স্থাপত্যেঠসৌকর্য বৃদ্ধি করে বিবৃতির অমোঘ মোহ এখানে নির্বাসিত। মিতকথনেই চিত্রকল্পঠি সংহত ও উজ্জ্বল। প্রগাঢ় à¦…à¦¨à§à¦§à¦•à¦¾à¦°à¦•à§‡à ¦‡ সুনিশ্চিত করে বৃষ্টি ‘নিঝুম’ হয়। প্রচলিত সংজ্ঞার Transferred Epithet –এর আলোয় এর অর্থকে সীমায়িত করা উচিত হবে না। আবার ছত্র বা স্তবকের স্থাপত্য অক্ষুণ্ণ রাখতে ‘নিঝুম’ বা ‘নিশ্চুপ’ কবির অনর্থক নিঃশ্বাসও হয়তো নয়। বরং শব্দ দুটোর যেন নিঃশর্ত অর্থমুক্তঠ¿ ঘটে চিত্রকল্পঠাকে পূর্ণতা দিয়েছে। শূণ্যতা শুধু চরাচরের নয়, যেন ব্যক্তিহৃঠয়েরও। চিরন্তন ঔজ্জ্বল্যৠঅম্লান ‘বৃষ্টিধোৠŸà¦¾ সূর্যকান্ঠ¤à¦®à¦£à¦¿â€™ অপেক্ষমান হৃদয়ের আশ্রয় হয়ে ওঠে। দৃশ্যকল্প ও ভাবকল্পের নিবিড় সম্মিলনই যেন বাক প্রতিমাটিঠে দ্যোতনাময় করে তুলেছে।
এভাবে কবি উত্তম দত্তের কবিতায় চিত্রকল্পৠর চিরাচরিত সংজ্ঞা অনুযায়ী দৃষ্টি-শ্রৠতি-à¦¸à§à¦ªà¦°à§à¦¶à§‡à ° বর্ণমালায় চিত্রিত হয়েছে এক একটা অনন্য দৃশ্যকল্প তাঁর নিজস্ব শৈলীতে। বোধ ছুঁয়ে প্রাণের স্পর্শ পেয়েছে সেই জড়ত্বের সংবেদনা। কিন্তু সেটা গুরুত্বপূঠ°à§à¦£ নয়। অনেক বেশী উল্লেখযোগ §à¦¯ হলো কবির যাদুস্পর্শ ে মর্ত পৃথিবীর পরিচিত যাবতীয় জড় সংবেদনা বিবর্তিত হয়েছে বাস্তব আর পরাবাস্তবৠর অন্তর্বর্ঠী জটিলতায়। কখনও স্বেদাক্ত লৌকিকজীবন, কখনও পরিচিত পুরাণ আর ইতিহাস, কখনও যৌনতা সংজ্ঞায়িত হয়েছে নতুন আঙ্গিকে।আ র রূপায়ণের অবর্ণনীয় অভিঘাতে কখনও নগ্নবাস্তঠের আকস্মিকতা, কখনও তীক্ষ্ণ আর্ত-à¦šà¦¿à§Žà¦•à¦¾à °, কখনও অনিরুদ্ধ ক্রন্দনে আলোড়িত হয় পাঠকের হৃদয় এক অভূত পূর্ব কম্পনে। পাঠ-অভিঘাতৠ‡à¦° এই স্পন্দন স্থূল ইন্দ্রিয়সৠমায় সর্বদা অনুভূত হয় না। বোধের গভীরে তার অনুরণন ওঠে। এখানেই তাঁর চিত্রকল্পৠর মূল সার্থকতা।


সূত্র : মূলপাঠ (Text) : Facebook Wall – Uttam Dutta

ফেসবুক মন্তব্য